দুই সতীনের ভোট যুদ্ধে জমে উঠেছে তৃতীয় দফা ইউপি নির্বাচন। সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে দুই সতীনসহ পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় বিপাকে পড়েছে ভোটাররা। এমন চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়ন নির্বাচনে।
উপজেলার চন্দ্রখানা বুদারবান্নি গ্রামের ফজলু কসাইয়ের তিন স্ত্রীর মধ্যে এবারের ইউপি নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন দুইজন। বড় স্ত্রী আঙ্গুর বেগম কলম প্রতীক আর ছোট স্ত্রী জাহানারা বেগম তাল গাছ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
স্বামী বড় স্ত্রীকে সমর্থন দেয়ায় মেঝো স্ত্রী নাজমা বেগমও তার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন। এদিকে স্বামীর সমর্থন না পেলেও ছোট স্ত্রী জাহানারা বেগম নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াননি। ফলে ঘরের লড়াই নেমেছে মাঠে।
দুই সতীনের ভোট যুদ্ধে প্রার্থী হওয়ায় চমক সৃষ্টি করেছে উপজেলাজুড়ে। হাটবাজার কিংবা চায়ের দোকান সর্বত্রই ভোটারদের মুখে মুখে দুই সতীনের লড়াই। ফলে ২৮ নভেম্বর ভোট গ্রহণ পর্যন্ত দুই সতীনের ভোটের কাঙ্ক্ষিত ফলাফলের অপেক্ষার প্রহর গুনছেন ভোটাররা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডে সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন আঙ্গুর বেগম ও জাহানারা বেগম। বড় স্ত্রী পক্ষে স্বামী ফজলু কসাই এবং মেঝো স্ত্রী নাজমা বেগম আঙ্গুর বেগমের পক্ষ ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন।
ফজলু কসাই বলেন, আমার ছোট স্ত্রী জাহানারা বেগম আগের ইউপি নির্বাচনে হেরে গিয়েছিল। এবারের নির্বাচনে জনগণ আমার প্রথম স্ত্রী আঙ্গুর বেগমকে সমর্থন দিয়েছে। এজন্য আমিও তার পক্ষে সমর্থন দিয়েছি। ছোট স্ত্রীকে নিষেধ করার পরেও সে তার মনোনয়ন প্রত্যাহার করেনি। সে একা একা ভোটের মাঠে কাজ করছে।
আঙ্গুর বেগম বলেন, আমরা দুই সতীন এবার ভোটে অংশ নিয়েছি। গত ইউপি ভোটে আমার সতীন হেরে গিয়েছিল। এবারের নির্বাচনে আমার স্বামী এবং ভোটাররা নতুন মুখ হিসেবে আমাকে সমর্থন করায় আমি ভোটে দাঁড়িয়েছি। আশা করি ভোটাররা আমাকে নিরাস করবে না।
জাহানারা বেগম জানান, গত ইউপি নির্বাচনে আমার স্বামীর সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলাম। সেবার আমি কয়েক ভোটে হেরে দ্বিতীয় হয়েছিলাম। আমার জনপ্রিয়তার ঈর্ষান্বিত হয়ে আমার সতীন আঙ্গুর বেগম স্বামীকে ফুসলিয়ে প্রার্থী হয়েছে। নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়াতে আমাকে চাপ দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমি গত চার-পাঁচ বছর ধরে ভোটের জন্য কাজ করে এসেছি। তাই স্বামীর সমর্থন না পেলেও আমার পাশে আমার ভোটাররা রয়েছে। আমি আশাবাদী আমি জয়লাভ করব।
তৃতীয় সতীন নাজমা বেগম বলেন, আমরা তিন সতীনের মধ্যে আমার বড় এবং ছোট সতীন ভোটে অংশ নিয়েছে। আমার স্বামী বড় সতীনকে সাপোর্ট দিছে সেজন্য আমি তার হয়ে কাজ করছি।
ফুলবাড়ি ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ভোটার গৃহিণী বুলবুলি আকতার বলেন, জাহানারা আপা এর আগেও ভোটে দাঁড়াইছিল। এবার তার সতীনসহ প্রার্থী হওয়ায় হামরা চিন্তায় আছি কাকে ভোটটা দেমো।
একই ওয়ার্ডের ভোটার শ্রমিক মঞ্জু মিয়া বলেন, দুই সতীনে সতীনে লড়াইয়ে আমরা ভোটাররাই বিপদে পড়ে গেছি। কাকে ভোট দেবো আর কাকে ভোট দেবো না।
ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডে ভোটার কৃষক আকতার হোসেন বলেন, ৭, ৮, ৯নং ওয়ার্ডে একই পরিবারের দুইজনসহ ৫ জন মহিলা মেম্বার প্রার্থী। এর মধ্যে ৭, ৮নং ওয়ার্ডে কোনো প্রার্থী নেই। ৯নং ওয়ার্ডে দুই সতীনসহ ৫ জন প্রার্থী। দুই সতীন দাঁড়ানোর ঘটনা হাস্যকর পরিস্থিতি হয়েছে আর এই কারণে ভোটাররাও সিদ্ধান্ত হীনতায় ভুগছে- কাকে ভোট দিবে।
চলতি মাসের ১২ নভেম্বর শুক্রবার প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়। এর মধ্যে কলম মার্কা আঙ্গুর বেগম, তালগাছ মার্কা জাহানারা বেগম, মাইক মার্কা নুরী বেগম, সূর্যমুখী ফুল মার্কা আঞ্জুমান আরা বেগম এবং অপরজন আঙ্গুর বেগম বক মার্কা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
প্রতীক পাওয়ার পর থেকে অন্যান্য প্রার্থীর মতই মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দুই সতীন। উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে সমর্থক,ভোটারদের মাঝে প্রশ্ন জেগেছে দুই সতীনের মধ্যে নাকি অপর প্রার্থীদের মধ্যে কে হাসবে বিজয়ের হাসি? আর প্রশ্নের অবসান ঘটবে আগামী ২৮ নভেম্বর ভোটের দিন ফলাফল পাওয়া পর্যন্ত।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।